যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় দাবি করা হচ্ছে পেশাদার ফুটবলাররা তাদের দীর্ঘ খেলোয়াড় জীবনে যেভাবে বার বার হেড দিয়ে বল ঠেকান, সেটার কারণে তাদের মস্তিস্কের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির আশংকা আছে।
এই গবেষণার আগে বিভিন্ন ফুটবলারের উদাহারণ দিয়ে বলা হচ্ছিল, যারা বেশি হেড দিয়ে খেলেন তাদের শেষ জীবনে ডিমেনশিয়া’র ঝুঁকি বাড়ে।
ইংল্যান্ডের ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, তারা এই গবেষণার ফল বিস্তারিত পর্যালোচনা করে দেখবে।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, যারা বিনোদনের জন্য মাঝে মধ্যে ফুটবল খেলেন, তাদের ক্ষেত্রে এটা সমস্যা নয়। কেবল পেশাদার ফুটবলারদের ক্ষেত্রেই এরকম ঝুঁকির কথা বলছেন তারা।
ওয়েস্ট ব্রম ক্লাবের সাবেক স্ট্রাইকার জেফ অ্যাস্টেল মাত্র ৫৯ বছর বয়সে ডিমেনশিয়ায় ভুগে মারা যান। তাঁর মেয়ে ডন অ্যাস্টেল বলেছেন, তাঁর বাবার এই রোগ যে পেশাদার ফুটবল খেলার কারণেই হয়েছিল সেটা স্পষ্ট।
২০০২ সালে যখন তাঁর মৃত্যু হয় তখন তদন্তে দেখা গিয়েছিল যেভাবে ফুটবলার জীবনে তিনি তার মাথা দিয়ে বার বার শক্ত চামড়ার বল খেলেছেন, সেটা তার মস্তিস্কের ক্ষতি করেছিল।
তখন এই বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলে বলে অভিযোগ ওঠে। ‘ফুটবল জগত তখন এটা গোপন করার চেষ্টা করছিল যে এই খেলাটাও প্রাণঘাতী হতে পারে’, বলছিলেন ডন অ্যাস্টেল।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে পাঁচজন পেশাদার এবং একজন শৌখিন ফুটবলারের মস্তিস্ক পরীক্ষা করে দেখে। এরা গড়ে প্রায় ২৬ বছর ধরে ফুটবল খেলেছে।
দেখা গেছে তাদের ছয় জনেরই বয়স যখন ষাটের কোঠায়, তাদের সবার ডিমেনশিয়া হয়েছিল।
মৃত্যুর পর পোস্ট মর্টেম করে বিজ্ঞানীরা এদের মস্তিস্কের ক্ষতি হয়েছিল বলে ইঙ্গিত পেয়েছে। মস্তিস্কের এরকম কন্ডিশনকে বলে ক্রনিক ট্রম্যাটিক এনসেফালোপ্যাথি। এর ফলে স্মৃতি মুছে যাওয়া, বিষন্নতা এব ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয় মানুষ।
ইউনিভার্সিটি কলেজ, লন্ডনের অধ্যাপক হিউ মরিস বলেন, আমরা যখন এদের মস্তিস্ক পরীক্ষা করে দেখি, তখন সেখানে এমন সব পরিবর্তন লক্ষ্য করি, যা বক্সারদের মস্তিস্কে দেখা যায়। সুতরাং এই প্রথম আমরা এমন প্রমাণ পাচ্ছি যে এই ফুটবলাররা তাদের শুরুর জীবনে এমন কিছু করেছেন যার কারণে তাদের মস্তিস্কে প্রভাব পড়েছে এবং যা থেকে তাদের ডিমেনশিয়া হয়েছে।